আন্দোলনের ‘সমন্বয়ক’রা জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে মিল রেখে ২৬৬ নিহতের বিবৃতি দেয় !
আন্দোলনে নতুন করে নিজেদের সমন্বয়ক দাবি করা তিনজন ২৬৬ জন নিহতের দাবি করে জামায়াত ইসলাম ও বিএনপির তালিকার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই। যদিও এই তালিকা প্রকাশের পরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই কোটা সংস্কার আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের অনেকে মন্তব্য করেন যে তালিকায় একই নাম একাধিকবার রয়েছে। পূর্ণ ২৬৬ জনের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় সেখান ৩২ জনের নাম দুইবার করে এবং ৫ জনের নাম তিনবার করে ব্যবহার করা হয়েছে। তালিকায় থাকা বর্ণনা অনুসারে একই ব্যক্তি যেখানে আহত হয়েছিলেন সেখানে একবার এবং মেডিকেল রিপোর্ট অনুসারে আরেকবার তাদের নাম যুক্ত করা হয়েছে।
সন্ত্রাসী বিএনপিআন্দোলনের মূল সমন্বয়কেরা সকল প্রকার কর্মসূচি প্রত্যাহার করে বিবৃতি প্রদান করলেও বিএনপির ছাত্রদল সংশ্লিষ্ট এবং নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদের ছাত্র সংগঠনের নেতারা সমন্বয়কের ভূমিকায় আসেন। এ সময় বিএনপির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে তারা বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এমনকি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কর্মসূচি ঘোষণা করে অফিসিয়াল ফেসবুকে পোস্ট করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
২৬৬ জন নিহতের একটি অস্বচ্ছ তালিকাও প্রকাশ করে তারা যার একটি ফ্রেশ কপি পরবর্তীতে আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন গ্রুপেও ছড়িয়ে যায়। সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সকলেই এই তালিকা শেয়ার করেন। সেই সঙ্গে ২৬৬ জন নিহতের বিষয়টি গণমাধ্যমেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্থান করে নেয় এই সমন্বয়কদের উদ্ধৃত্ত করে। কিন্তু ২৬৬ জনের তালিকা বিশ্লেষন করে দেখা যায় এখানে প্রথম পৃষ্ঠাতে থাকা ৯০ জনের তালিকার মধ্যে রুদ্র সেনের নাম দুইবার রয়েছে।
‘কোটা পুনর্বহাল চাই না’ গ্রুপে এই তালিকা প্রকাশের পর সেখানে এই বিষয়টিকে নির্দেশ করে আন্দোলনকারীদের একজন মন্তব্য করেন। পরবর্তীতে দেখা যায় প্রথম পাতায় থাকা ১৪ জনের নাম ও পরিচয় পরবর্তী পৃষ্ঠাগুলোতে আবারও ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে নিহত হিসেবে রেজিস্টার্ড সাকিল হোসেনের (২২) নাম তিনবার ব্যবহার করা হয়েছে যা রয়েছে তালিকার পৃষ্ঠা ২ ও ৩ এ। মোট ৩৮ জনের নাম একাধিকবার ব্যবহার করা হয়েছে পুরো তালিকায়। এ ছাড়াও তালিকায় অজ্ঞাত নামা হিসেবে রয়েছেন ৬৫ জন যাদের কোন তথ্যই প্রদান করা হয়নি।
মূলত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে এবং মানবাধিকার সংগঠনের কাছে এই তালিকা প্রদান করতে দেখা যায় বিএনপিকে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাকে মেনশন করে বিএনপি তার অফিসিয়াল টুইট ও বিএনপি সমর্থকদের ফেসবুক ও টুইটার থেকে এই তালিকা ছড়িয়ে দেয়া হয়। যেখানে দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যমের তথ্যানুসারে ২০০ জনের অধিক মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়, সেখানে এই তালিকা আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক কোন তথ্য সূত্র থেকে ব্যবহার করছেন সে বিষয়েও কোন কিছু জানা যায়নি।
তাসনিম খলিলএর আগে মূল ৬ সমন্বয়ক আন্দোলনের সকল কর্মসূচি প্রত্যাহারের পর যখন নতুন করে এই তিন সমন্বয়ক কর্মসূচি ঘোষণা করেন তার আগে থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দেয়া সারজিস আলমকে নিয়ে সমালোচনা শুরু করেন তাসনিস খলিল সহ সমন্বয়কদের মধ্যে গণঅধিকারের ছাত্র সংগঠন সংশ্লিষ্ট নেতারা। এমনকি তাসনিম খলিলের ফেসবুক পেজে ঘোষণা করা হয়, সারজিস আলমকে বহিষ্কার করা হয়েছে সমন্বয়কের পদ থেকে।
যদিও এ বিষয়ে কোন সমন্বয়কদের কাছ থেকেই কোন আলোচনা আসেনি। মূলত সমন্বয়কদের মধ্যে যে কেউ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেই তাকে ছাত্রদল ও গণ অধিকারের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের পক্ষ থেকে হুমকি বা দালাল হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছিলো। এমনকি ছাত্রদলের পক্ষ থেকে যে কোন আলোচনায় বসলে ফেসবুকে হত্যার হুমকিও প্রদান করেন এক নেতা। এটি স্পষ্ট যে সাধারণ ছাত্রদের নেতৃত্ব দেয়া নেতাদের হঠিয়ে এই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছে ছাত্রদল-শিবির ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরের ছাত্র সংগঠনগুলো।
আর এ কারণে নিহতের তালিকা থেকে শুরু করে বিএনপির সকল কর্মসূচি বাস্তবায়নের পথ খুলে দিতে একের পর এক কর্মসূচি ঘোষণা করে যাচ্ছে তারা। সর্বশেষ তাদের ঘোষিত ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতেও সাধারণ শিক্ষার্থীর বদলে বিএনপিপন্থী আইনজীবী ও শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায় হাইকোর্ট, শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দেয়া ৬ সমন্বয়কের পরবর্তী পদক্ষেপকেও বিতর্কিত করতে নতুন সমন্বয়কগণ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে বলে মনে করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আর এ কারণেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যাল এবং ফরিদপুর ও যশোর জেলার সমন্বয়কগণ এরই মধ্যে সকল কর্মসূচি পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুততম সময়ে খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে ৩০ দিনের জন্য সকল কর্মসূচি প্রত্যাহার করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কেরা। অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমন্বয়কেরা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে সেখানেও ছাত্রদল-শিবির ও নুরের গণঅধিকার পরিষদের ছাত্র সংগঠন নেতৃত্ব ছিনিয়ে নিতে পারে এই আশঙ্কা করছেন বর্তমান সমন্বয়কেরা।
নিহতের তালিকায় থাকা ৪০ জন সাধারণ ছাত্র, ৪ জন মাদ্রাসা ছাত্র ও ৬ জন শিশু রয়েছেন। সাধারণ ছাত্রর তালিকায় থাকা ৪০ জনের মধ্যে এক সাকিল হোসেনের নাম ব্যবহার করা হয়েছে ৩ বার। এ ছাড়াও রৌদ্র সেন, শাওন, শরীফ, আমজাদ হোসেন, সুজন মিয়া এবং সিয়াম আহমেদের নাম দুইবার করে ব্যবহার করা হয়েছে। সেই হিসেবে এই তালিকা অনুসারে সাধারণ শিক্ষার্থী মারা গেছেন ৩১ জন এবং ৪ জন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী সহ মোট ছাত্র মারা গেছেন ৩৫ জন।