জাতীয়

আস্থা রাখছেন বিদেশীরা, আসছে পর্যবেকক্ষক

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নেতিবাচক মনোভাবের পরিবর্তন হয়েছে বিদেশী পর্যবেক্ষকদের। প্রথম দিকে আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণে না আসার কথা জানালেও বেশির ভাগ বিদেশীরা সেই মত পাল্টেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুরু করে কমনওয়েলথ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশিরভাগ দেশ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে তাদের প্রতিনিধি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা এখন নিশ্চিত হয়েছেন যে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্বচ্ছতার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে বিদেশিরা ভোটারদের অংশগ্রহণের বিষয়টিও নিশ্চিত হতে পেরেছেন।
বিদেশী পর্য়বেক্ষকরা যাতে নির্বাচন পর্যবক্ষেণে আসতে না পারেন সে জন্য বিএনপি-জামায়াত জোটের তরফ থেকে বিদেশী দূতাবাসগুলোতে নানামুখি নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোটের সকল অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ১২ টি দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা আসবেন বলে ইসিকে জানিয়েছেন। এছাড়াও কমনওয়েলথসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনতে সামনে রেখে কয়েক মাস আগেও ঢাকায় নিয়োজিত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস ব্যাপক দৌঁড়ঝাপ করেন। তারা নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় গিয়ে সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন। এমনকি দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দৌঁড়ঝাপ করেন। এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ একে একে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা ঢাকায় এসে কূটনীতিকদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন কমিশন, বিভিন্ন রাজনতিক দল ও সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ইতিবাচক পদক্ষেপে বিদেশী কূটনীতিক ও প্রতিনিধিরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তারা পর্যবেক্ষক পাঠাতেও সিদ্ধান্ত নেন। এর ফলে যারা ভেবেছিলেন এবারের নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসবেন না, কিংবা বিদেশি পর্যবেক্ষকরা দৃষ্টি পিরিয়ে নিয়েছেন তাদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াত জোটের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

এদিকে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও ভোটাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সব ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনাররা ইতিমদ্যে দেশের বিভিন্ন বিভাগী শহর ও জেলা শহরে গিয়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এবং স্থানীয় পর্যায়ে বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। এসব বৈঠকে তারা নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনের নিশ্চয়তা দিচ্ছেন। একইসঙ্গে ভোটরাদেরকে কেন্দ্রে এসে তাদের রায় প্রদানের আহ্বান জানাচ্ছেন। তাদেরকে সচেতন করে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ারি আহসান হাবিব খান শনিবার ঝালকাঠিতে এক সভায় অংশ নিয়ে বলেছেন, কেউ যদি ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্য কমিশনাররাও দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে প্রায় অভিন্ন কথা বলছেন। এসব কারণে দ্বাদশ নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের কারো কারো মাঝে কিছুদিন আগেও যে সংশয় দেখা দিয়েছিল তা এখন আর নেই।
আগামী নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপি-জামায়াত জোট এবং তাদের অনুসারী বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা নানামুখি তৎপরতা চালিয়েছিলেন। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কমিশন আওয়ামী লীগের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে এমন প্রচার-প্রচারনাও চালানো হয়েছে। এমনকি সরকার বিরোধী পক্ষ থেকে বিদেশিদের বুঝানো হয়েছে যে, এই নির্ভাচন কমিশনের অধীনে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
শুধু তাই নয়, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রতিনিধিরা রাজপথের বিরোধী দলের সঙ্গে যখনই বৈঠক করেছে তখনই তারা দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই এবং তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করতে থাকেন।
কিন্তু কুটনীতিক ও বিদেশিরা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, সরকারের মন্ত্রী, সচিব এবং নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পান। ফলে সরকারি ও বিরোধী দলের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য শুনে বিদেশিরা ও কূটনীতিকরা প্রথমদিকে বিব্রত হলেও ধীরে ধীরে তাদের কাছে নির্বাচন বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেছে।
ঢাকা নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কুটনীতিক ও বিদেশ থেকে আসা বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিকে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সব সময়ই বলা হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে যা যা প্রয়োজন তা করা হবে। বিদেশী প্রতিনিধি ও কূটনীতিকরা সুষ্ঠু নির্বাচনের বিসয়ে ইসির পদক্ষেপ দেখে সন্তুষ্ট হয়েছেন। সম্প্রতি ইসির সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে সবকিছু জেনে কমনওয়েলথের একটি প্রতিনিধি দল সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ্যেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায় তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, হরতাল-অবরোধের নামে জ্বালাও-পোড়াও করে বিএনপি-জামায়াত জোট এখন নিজেরাই বিভিন্ন মহলের কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের জন্য ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, সেটি এখন বিএনপি-জামায়াতের ওপর প্রয়োগ হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *