কক্সবাজার

ইয়াবাসহ মাদক ব্যবহার বন্ধ না হলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পক্ষে-বিপক্ষে লাগাতার প্রচারণা, আন্দোলন, অবরোধ-হরতাল ও শান্তি মিছিলের হৈ চৈ এর মধ্যে ইয়াবাসহ মাদক চোরাকারবারীরা অধিক সক্রিয় হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। বিগত ২৪ নভেম্বর দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকার শেষের পৃষ্টায় ’টেকনাফে এক লক্ষ ইয়াবাসহ দুই মাদক কারবারি আটক’ শিরোনামে প্রকাশিত সচিত্র সংবাদটি তার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন ইয়াবার মামলায় জামিন পাওয়া যায় না মর্মে প্রচার হওয়ায় আদালত পাড়ায় মাদক পাচারের গডফাদার ও জামিনের দালালদের ভিড় আর দেখা যায় না। আগের মত প্রায় প্রতি দিন ইয়াবা উদ্ধারের সংবাদ সংবাদপত্রে না দেখে ইয়াবা পাচার এখন কিছুটা কমেছে বলে বলাবলি হচ্ছিল। ফিলিস্তিনের গাজায় স্বাধীনতা সংগ্রামী হামাস অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পারমানবিক শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপিয় দেশগুলোর সমর্থনপুষ্ট ইসরায়েলের সাথে অসম যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে শুধু মানসিক শক্তি, আত্মবিশ্বাস, ঈমানের জোর বা মনোবলের উপর ভিত্তি করে। বাংলাদেশে ইয়াবা,মাদক পাচারকারীরা সশস্ত্র সীমান্ত রক্ষী বাহিনী,বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তথা আইনআদালতকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংসকারী নিরব মরণাস্ত্র মাদক চোরাচালানী অব্যাহত রাখার মনোবল বা সাহস কোথায় পায়? চোরাকারবারীদের ধৃত করার বা ধৃত হওয়ার পর মামলার তদন্ত ও বিচারের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন বড় কর্তার সাথে যোগাযোগ করে টাকার বিনিময়ে রেহাই পাওয়ার উপায় আছে তা জানতে পারলে চোরাকারবারীদের মনোবল বৃদ্ধি পায়। শরিষার মধ্যে কমবেশী ভুত সব সময় ছিল বলে মাদক পাচার কোন সময় শতভাগ বন্ধ করা যায়নি। দেশে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক সেবন বা ব্যবহার বন্ধ করা গেলে চোরাচালানীর মাধ্যমে মাদক আমদানী স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। অর্থনীতির ধর্ম অনুযায়ী চাহিদা না থাকলে সরবরাহও থাকবে না ।

মাদক সেবন বন্ধ করতে হলে সামাজিক আন্দোলন শুরু করতে হবে। এখন নির্বাচন করে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ছোটবড় রাজনৈতিক দলগুলো ইউনিয়ন,ওয়ার্ড পর্যায়ে পর্যন্ত কমিটি গঠন করে থাকে। মাদক সেবন বা ব্যবহার বন্ধ করার জন্য সকল পাড়ায় মহল্লায় কমিটি গঠন করতে হবে। প্রত্যেক পরিবারের প্রধানকে সদস্য করতে হবে,জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে। কোন পরিবারে মাদকাসক্ত সদস্য থাকলে গোপন না করে তাকে সংশোধন করতে হবে,সংশোধন কেন্দ্রে ভর্তি করাতে হবে। মাদকাসক্ত ছেলেমেয়ে যদি নিয়ন্ত্রণহীন ও বেপরোয়া হয়ে যায় তাকে পুলিশের হাতে হস্তান্তর করতে হবে। উপজেলা পর্যায়ে পর্যন্ত মাদকাসক্তদের সংশোধনের জন্য আধুনিক কেন্দ্র বা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই খাতে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে। দেশের অভুতপূর্ব অবকাঠামো ও যোগাযোগ উন্নয়নের জন্য লক্ষ কোটি টাকা খরচ করে তা রক্ষণাবেক্ষনের জন্য যদি যোগ্য প্রজন্ম তৈরী করা না হয় , তবে দেশের ভবিষ্যৎ মাদকাসক্ত প্রজন্মের হাতে কি নিরাপদ থাকবে?
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে এবং বিসিএস সহ সকল সরকারী-বেসরকারী চাকুরীর আবেদনের পূর্ব শর্ত হতে হবে মাদকাসক্ত নন মর্মে ডৌপ টেস্ট। দেশের যে কোন রাজনৈতিক দলের সদস্যপদের জন্য,জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য যোগ্যতার একটি শর্ত হবে মাদকমুক্ত মর্মে ডৌপ পরীক্ষায় পাশের সার্টিফিকেট। শুধু বক্তৃতা, র্যা লী,মানববন্ধন ও শ্লোগান দিয়ে মাদকসেবন ও মাদক পাচার বন্ধ হবে না তা ইতিমধ্যে পরীক্ষিত হয়েছে। সামাজিক আন্দোলন, সকল পেশাজীবী ও রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিক সহযোগীতা এবং সরকারের উল্লেখিত পদক্ষেপে দেশে মাদকের ব্যবহার বন্ধ হবে। মাদক সেবন বন্ধ হলে, মাদক পাচারও বন্ধ হবে। তখন দেশে মাদকাসক্ত প্রজন্ম তৈরী হওয়ার আর কোন সম্ভাবনাও থাকবে না।

লেখকঃ একজন কলামিষ্ট, সাবেক সভাপতি কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি, সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটার, বহু বইয়ের প্রণেতা এবং কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একজন সিনিয়ার আইনজীবী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *