কক্সবাজারস্বাস্থ্য

কক্সবাজারে ডেঙ্গু : প্রস্তুতি ও মোকাবিলায় সচেষ্ট হোন

ডেঙ্গু একসময় রাজধানী ঢাকার সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হতো। ডেঙ্গু মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও দিন শেষে তার খুব একটা সুফল পাওয়া যায়নি। দেখা গেল, ডেঙ্গু রাজধানী ছাড়িয়ে অন্যান্য বড় শহর ও জেলা-উপজেলা শহরে বিস্তৃত হয়েছে। গত বছর ডেঙ্গু ভাইরাসের নতুন বড় কেন্দ্র হয়ে ওঠে কক্সবাজার শহর। এ নিয়ে জনস্বাস্থ্যবিদেরা উদ্বেগও প্রকাশ করেছিলেন। এবারও দেখা যাচ্ছে, কক্সবাজারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

গত জুনে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৫৩ জন ডেঙ্গু রোগী। আর গত ৩০ জুলাই পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হন ২৭১ জন; অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে পাঁচ গুণ। সদর হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বলছেন, ভারী বর্ষণ ও শহরের জলাবদ্ধতার কারণে মশার বংশবিস্তার ঘটছে। এ কারণে আগের তুলনায় ডেঙ্গু রোগী বেড়ে গেছে। ডেঙ্গু রোগী বেশির ভাগ শহর এলাকার বাসিন্দা। শহরের পাশাপাশি টেকনাফ, উখিয়া, রামু, ঈদগাঁও, চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে।

বর্ষাকাল হওয়ায় এখন ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী এডিস মশার বংশবিস্তারের সময়। এ ছাড়া আগের বছরের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বিষয়টিও আছে। ফলে এ বছর ডেঙ্গু মোকাবিলায় যে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার ছিল, তার যথেষ্ট ঘাটতি ছিল না বলে সচেতন মহল জানাচ্ছে। তঁাদের বক্তব্য, মশা নিধনে পৌরসভার তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। উল্টো শহরের বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার লার্ভা দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যাচ্ছে, শহরের ২৩টির বেশি সড়কের পাশে নালা-নর্দমা ও ময়লা-আবর্জনায় ভরে আছে। স্থানীয় লোকজন জানান, সন্ধ্যার পর মশার উৎপাত বেড়ে যায়। ঘরে থাকা দায় হয়ে পড়ে। মশারি টাঙিয়েও শিশুরা ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারছে না। শহরের অলিগলিতেও পড়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। এতে জমে থাকা পানি ও জলাবদ্ধতা থেকে জন্ম নিচ্ছে মশা। কোথাও স্বস্তি নেই মানুষের।

এ ছাড়া কক্সবাজার অঞ্চলে ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়াচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরগুলো থেকেও। গত সাত মাসে আড়াই সহস্রাধিক রোহিঙ্গা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন তিনজন।

ডেঙ্গু মোকাবিলায় কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃপক্ষের ভূমিকা হতাশাজনক। কেন তারা আগাম প্রস্তুতি নিল না? নগরবাসীর জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তাদের আরও তৎপর হতে হবে। রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে ভূমিকা রাখতে হবে। আমরা জেলা শহরটিতে গত বছরের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখতে চাই না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *