কক্সবাজার শহরে শিক্ষার্থীদের ৩ দিনের স্মার্ট ট্রাফিকিং
আমাদের চালকরা এখনো ট্রাফিক নিয়ম কানুন গুলো ভালোভাবে জানে না। তবে তাদেরকে বুঝালে কথা শুনে। চালকরা আমাদের অবাধ্য হয়নি। আমরা যে দু- তিন দিন দায়িত্ব পালন করেছি তারমধ্যে দেখা গেছে অধিকাংশ চালক না বুঝেই ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে। আমরা বুঝেছি তাদেরকে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার। যানজট নিরসনে তাদের সচেতনতা খুবই জরুরী। উপরোক্ত কথাগুলো বলছিলেন কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া জাহান। সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় যানবাহনের সুশৃঙ্খল চলাচলে গুনগাছতলা এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
ছাত্র আন্দোলনের মুখে সরকারের পতনের পর তিন দিন ধরে পুলিশ যখন নিষ্ক্রিয় এ অবস্থায় সড়কের শৃংখলা রক্ষা ও যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। গত তিনদিন যাবত সারা দেশের মতো কক্সবাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করছেন শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সাদিয়া জাহান তাদের একজন। সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষা শুধু নয় তারা কাজ করছেন শহরের বিভিন্ন সড়কের জমে থাকা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করতে।
ট্রাফিক পুলিশ নিষ্ক্রিয়ভাবে থাকার কারণে শহরের একাধিক পয়েন্ট বিশেষ করে যানজটপূর্ণ এলাকাগুলোতে দায়িত্ব পালন করেছেন কক্সবাজারের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন কক্সবাজার সরকারি কলেজ, কক্সবাজার সিটি কলেজ, হারবার্ট কলেজ, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কক্সবাজার মডেল হাই স্কুল, বায়তুশ শরফ উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। তারা সচেতন হয়ে দেশের ক্রান্তিলগ্নে যে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন সেটি অনেকের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
এদিকে গত ৩ দিন শহরের সমস্ত পয়েন্ট ছিল পুরোপুরি পুলিশবিহীন। সড়কে ছিলনা ট্রাফিক পুলিশও। তবে গতকাল থেকে জীবনযাত্রা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে আসতে দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কোথাও কোনো পুলিশের অবস্থান ছিলনা । বিভিন্ন পুলিশ বক্স, ট্রাফিক বক্স, থানায় ও তেমন কোন পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়নি। তারপরও নিয়ন্ত্রিতভাবে চলেছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন।
শহরের ভোলাবাবুর পেট্রোল পাম্প এলাকায় দাড়িয়ে থাকা টমটম চালক মনিরুল ইসলাম বলেন ‘আমি গুমগাছ তলা রাস্তার মাথা থেকে যাত্রী নিয়ে টার্মিনাল হয়ে এ পর্যন্ত এসেছি। কিন্তু সড়কের কোনো মোড়েই পুলিশ অথবা ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখতে পাইনি। সড়কে স্বাভাবিকের চেয়ে যানবাহন চলাচল কম রয়েছে। ফলে কোথাও কোনো যানবাহনের জট নেই। কোথাও জট তৈরি হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে। আমাদের বুঝিয়ে লাইন সোজা করছে। আমরাও তাদের কথা মেনে চলেছি। কোথাও পাঁচ মিনিট কোথাও ২ মিনিট এভাবে দাঁড়িয়ে আমরা তাদের সহযোগিতা করেছি। যানজট তেমন একটা দেখা যায়নি। তারা অত্যন্ত কষ্ট করে বৃষ্টিতে ভিজে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
এদিকে শহরের বাজার ঘাটা, ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্প, গুনগাছতলা, হলিডেমোড, কলাতলীর মোড়, বাস টার্মিনাল এলাকা, লিংক রোড, খুরুশকুল রাস্তার মাথা সহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে শিক্ষার্থীরা রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে নিরলস প্রচেষ্টা চালাতে দেখা গেছে। রাস্তায় দায়িত্ব পালনকালে তারা এটা বুঝছেন যে চালকদের সচেতনতা খুবই জরুরী। বিশেষ করে ট্রাফিকের নিয়ম-কানুন বিষয়ে তাদের ভেতরে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলেই যানজট মুক্ত কক্সবাজার উপহার দেওয়া কঠিন কিছু নয়।