জাতীয়

জাতীয় সংসদের পরপরই উপজেলা নির্বাচন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি দেশের প্রায় ৫০০ উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজও চালিয়ে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ইতোমধ্যে উপজেলা পরিষদগুলোর মেয়াদ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে তারা। আগামী মার্চ মাসে এ নির্বাচন শুরু করার লক্ষ্যে নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনার কাজও প্রায় শেষ। সংসদের পরপরই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে ইসিকে। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক মাস পর এই স্থানীয় সরকার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তার আগেরবার তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পর।

এবারও এর কাছাকাছি সময় বেছে নিতে পারে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ধারণা, সংসদ নির্বাচনের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা দেখা দিলে কমিশন ২০১৪ সালের মতোই দ্রুত উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এ বিষয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সংসদের সঙ্গে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সরঞ্জামও কেনা হয়েছে। কারণ সংসদ নির্বাচনের পরপরই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পরই ১৯ জানুয়ারি আগের নির্বাচন কমিশন উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মোট ছয়টি ধাপে ওই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক মাস পর ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন হয় পাঁচ ধাপে ওই বছরের ১০ মার্চ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত।

উপজেলা পরিষদ আইন অনুসারে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। সেই হিসাবে উপজেলা নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়ে গেছে চলতি বছরের নভেম্বরের শুরু থেকেই।

এদিকে সময় ঘনিয়ে এলেও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখনও তেমন তৎপর নন। অনেক উপজেলা চেয়ারম্যান সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যানদের একটি অংশ এ বিষয়ে আগ্রহী। ইতোমধ্যে প্রায় ১২ জন চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে দলের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, গতবারের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচন হবে দলীয় প্রতীকে। পরিষদের পদে থেকেই এ নির্বাচনের প্রার্থী হওয়া যাবে। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যানÑ এ তিনটি পদেই নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সে কারণে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকে উপজেলা পরিষদের প্রার্থী মনোনয়নের কাজও করতে হবে।

গতবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ শুধু চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন দেয়। ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদটি দলের আগ্রহী সব প্রার্থীর জন্য উন্মুক্ত রাখে।

আগের কয়েকটি নির্বাচন

গতবার উপজেলা পরিষদের পঞ্চম সাধারণ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীক ব্যবহার হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী কয়েকটি দল ছাড়া অন্য দলগুলো অংশ নেয়নি। ফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয় মূলত নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে। প্রথম ধাপে ভোটগ্রহণ হয় ২০১৯ সালের ১০ মার্চ। এই ধাপে রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার সব উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়। এ ছাড়া দ্বিতীয় ধাপে ১৮ মার্চ, তৃতীয় ধাপে ২৪ মার্চ, চতুর্থ ধাপে ৩১ মার্চ এবং পঞ্চম ধাপে ১৮ জুন ভোটগ্রহণ হয়।

নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ৪৬৩টি উপজেলার মধ্যে ৩১৫টিতে জয়লাভ করেন। এর মধ্যে ১০৯টিতে জয়লাভ করেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হন ১৪৪টি উপজেলায়। তাদের বেশিরভাগই ছিলেন আওয়ামী লীগেরই বিদ্রোহী প্রার্থী। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থীরা তিনটি উপজেলায় এবং জাতীয় পার্টি-জেপির প্রার্থী একটি উপজেলায় জয়লাভ করেন।

তার আগে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের চতুর্থ সাধারণ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না হলেও ৪৫৮ উপজেলায় আওয়ামী লীগের ২২৩ জন (বিদ্রোহীসহ) প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অন্যদিকে এ পদে বিএনপির ১৫৮ জন (বিদ্রোহীসহ) এবং জামায়াতের ৩৬ জন নির্বাচিত হন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি (জাপা) সমর্থিত তিনজন ও অন্যান্য দল সমর্থিত ৩৮ জন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন।

ইসি সচিবালয়ের তথ্য অনুসারে গতবার ভোট পড়ার হারও ছিল কম। পাঁচটি ধাপে গড়ে ৪০.২২ শতাংশ ভোট পড়ে। তার আগে ২০১৪ সালে উপজেলার চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনে গড়ে ৬২.৩৭ শতাংশ ভোটার ভোট দেন। ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি এক দিনে অনুষ্ঠিত উপজেলার তৃতীয় সাধারণ নির্বাচনে ৪৭৫টি উপজেলায় ভোট প্রদানের এ হার ছিল গড়ে ৬৮.৩২ শতাংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *