জেলার বিভিন্ন থানায় পুলিশ সদস্যরা কাজে যোগ দিয়েছেন
ভয়-উৎকন্ঠা পুরোপুরি কাটেনি পুলিশ সদস্যদের।
ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর রাজধানীসহ সারা দেশের সব থানা পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে। হামলা ভাংচুর ও লুটপাটও হয়েছে দেশের ৬৫২ থানার মধ্যে ৪৭০ থানায়। সে হিসেবে ৭২ শতাংশ থানা আক্রমণের শিকার হয়েছে। মারাও পড়েছেন অনেক পুলিশ সদস্য। ফলে বন্ধ হয়ে যায় পুলিশের সব ইউনিটের কার্যক্রমও। এরেই মধ্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন মো. ময়নুল ইসলাম।
এদিকে নিরাপত্তাহীনতায় কর্মবিরতি ঘোষণা করে পুলিশ কর্মকর্তাদের একটি সংগঠন। দেশের সব জায়গায় বিক্ষোভ করে এবং বেশকিছু দাবিও তুলে ধরেন তারা। জনগনের নিরাপত্তা ও দেশের স্বার্থে সকলকে কর্মস্থলে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে কাজে যুক্ত হওয়ার নির্দেশ দেন নবনিযুক্ত আইজিপি। তবে ভয় কাটছে না পুলিশ সদস্যদের। কাজে ফিরতে অনীহা রয়েছে অনেকের। এর আগে থানার নিরাপত্তা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয় আনসার ও গ্রাম পুলিশকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালের দিকে সদর মডেল থানায় গিয়ে দেখা যায়, আনসার সদস্যরা বাইরে ডিউটি করছেন। গেইটের মুল ফটকে তালা লাগানো। থানার আশেপাশে পোড়ানো ও ভাংচুরের ক্ষত চিহ্ন। থানার প্রবেশ মুখে দু’পাশে সারি সারি গাড়ি পার্ক করে রাখা হতো। কিন্তু বৃহস্পতিবার সেখানে একটি গাড়িও দেখা যায়নি। চারপাশে শুধুই নিরবতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই পুলিশ সদস্য জানান, তাদের এখনও ভয় কাটছে না। আসার পথে কেউ হামলা করে কিনা সে ভয়ও তাড়া করেছে। এ জন্য সিভিল পোশাকে অফিসে আসতে হলো। নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে এখনও ভাবতে হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের।
পুলিশ লাইনের প্রধান ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ সদস্য জানান, কিছু কিছু কর্মকর্তা বর্তমানে অফিসে অবস্থান করছেন। বেশিরভাগ এখনও আসেননি। তাঁদের মধ্যে ভয় কাজ করছে।
থানায় দায়িত্বরত আনসার বাহিনীর ইনচার্জ সাইদুর রহমান বলেন, গত বুধবার দুপুর থেকে দায়িত্ব পালন করছি। থানার পুলিশ সদস্যরা এসে আবার চলে যায়। কারণ ভিতরে বসার মত পরিস্থিতি নেই। এখনো সবকিছু অগোছালো।
বিকেলে গিয়ে দেখা হয়, সদর মডেল থানার ওসি মো: রাকিবুজ্জামের সাথে। কথা হলে তিনি বলেন, আইজিপি মহোদয় সকলকে সন্ধ্যাদর মধ্যে কাজে যোগদান করতে বলেছেন। আমি দুপুরের পরে এসেছি। কিন্তু ভিতরে যাওয়ার মত পরিস্থিতি নেই। সবকিছু এখনো এলোমেলো। ল্যাপটপ, কম্পিউটার, চেয়ার, টেবিল সবকিছু ভাঙ্গাচোরা। এজন্য থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের অনেকে যোগ দিতে পারছেনা।
তিনি বলেন, কার্যালয়ে আপাতত পুলিশ সদস্য ছাড়া আর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সবাইকে পরিচয় নিশ্চিত করে প্রবেশ করতে হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নাম জানাতে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন উপপরিদর্শক (এসআই) জানায়, সরকারি কোয়ার্টারের থাকা ১১ টি পরিবারের সবকিছু ভেঙে তচনছ করে ফেলেছে। এমনকি ব্যবহারের লুঙ্গিটা পর্যন্ত বাদ যায়নি। আগে থেকে সরে পড়ার কারণে অনেকের জীবন রক্ষা পেয়েছে। আমাদেরও সংসার আছে। আমরাও মানুষ। আমরা এখনো নিজেকে নিরাপদ মনে করছিনা। আমাদের ১১ দফা দাবি ছিল। দাবির মধ্যে বিভিন্ন রেঞ্চ ও মেট্রোতে বদলি করার জন্য বলা হয়েছে।
জানা যায়, কক্সবাজার জেলায় থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রায় দেড় হাজার পুলিশ সদস্য রয়েছেন। তারমধ্যে অনেকে ছুটিতে আছেন। গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পরে বিক্ষুব্ধ জনতা জেলার বেশ কয়েকটি থানা ও পুলিশ বক্সে একযোগে হামলা ও লুটপাট চালায়। এই সময় আহত হয়েছেন অন্তত ১০০ জন পুলিশ সদস্য।
যতটুকু নিশ্চিত হওয়া গেছে তারমধ্যে সদর মডেল থানা ছাড়া-ও চকরিয়া থানা, রামু থানা, ঈদগাহ থানা, উখিয়া থানা, টেকনাফ থানা, পেকুয়া থানা, পুলিশ লাইন আক্রমনের শিকার হয়েছে। এছাড়া হামলাকারীরাদের হাত রেহায় পায়নি পুলিশ সুপার অফিস। পাশাপাশি সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের পুলিশ বক্স, ডলফিন মোড় পুলিশ বক্স। সদর থানা কোয়ার্টার ১১ টি বাসা লুট হয়েছে বলেও জানিয়েছেন পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা।
জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মো: মাহফুজ ইসলাম দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে থানায় এবং দপ্তরে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা তার নিজ নিজ কর্মে যোগ দিয়েছেন। যেসব থানাগুলোতে হামলার ঘটনা ঘটেছে এসকল থানায় সবকিছু ঠিক হলেই তারা কাজে ফিরবে। কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো আমরা ফাইনালী রিপোর্ট তৈরি করিনি। এজন্য এ মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না।
সাধারণ মানুষ মনে করছেন যতদ্রুত সম্ভব থানায় যেন পুলিশ সদস্যরা ফিরে যান। কারণ গত তিন সপ্তাহ থেকে থানায় বিচারের জন্য গিয়েও ফিরে এসেছেন হয়েছে অনেকে। এছাড়া চারিদিকে মানুষের মাঝে আতঙ্কে এখনো কাটছে না। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি, ছিনতাই, খুন বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কে দিন কাটছে। ফলে দ্রুত থানায় প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হলে উৎকন্ঠা কেটে উঠবে সবার মাঝে। এমনটাই মনে সচেতন মহল।
এর আগে বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দফতর থেকে পাঠানো এক খুদে বার্তায় কর্মস্থলে যোগ দিতে পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়। কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা হওয়া পুলিশ সদস্যদের পথে সহযোগিতা করতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, রাজনৈতিক দলের নেতা, ছাত্র-ছাত্রী ও আপামর জনসাধারণের কাছে এ আহ্বান জানানো হয়েছে।