জাতীয়

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ব্যাপক মিথ্যাচার করা হচ্ছে: শিক্ষামন্ত্রী

‘নতুন শিক্ষাক্রমের অংশ নয়— এমন বিষয়ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে ব্যাপকভাবে মিথ্যাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ভয়ানক রকম অপপ্রচার চলছে। সেটি করা হচ্ছে— ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থ হানি হওয়ার ভয়ে। কিছু ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছেন। তারসঙ্গে এখন তো নির্বাচনের মৌসুমে তো কিছু ঝামেলা থাকেই। নির্বাচনের ক্ষেত্রে যারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ থাকেন, তাদের উসকানি যুক্ত হয়ে গেছে। অতি ডান ও অতি বামের উসকানিও যুক্ত হয়ে গেছে। যেগুলো আমাদের প্রশিক্ষণের অংশ নয়, সেরকম কিছু ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে।’

রবিবার (৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠাভ্যাস উন্নয়নে দেশের ১৫ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩১ লাখ নির্বাচিত বই (পাঠ্যপুস্তক  ছাড়া) বিতরণ কার্যক্রমের উদ্ভোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদসহ অন্যান্য অতিথিরা বক্তব্য দেন।

‘শিক্ষাক্রম নিয়ে মিথ্যাচার’-এর প্রতিবাদ জানিয়ে অভিভাবকদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অভিভাবকরা দীর্ঘদিন থেকে অভ্যস্ত— বাচ্চা কত নম্বর পেলো; জিপিএ-৫ পেলো কিনা; প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হলো কিনা; অন্যের বাচ্চার চেয়ে আমার বাচ্চা বেশি নম্বর পেলো কিনা; এই বিষয়গুলো নিয়ে অতিমাত্রায় ব্যস্ত ছিলেন তারা। সে জায়গা থেকে বেরিয়ে প্রত্যেকটি কাজে সহযোগিতার জায়গায় তারা কাজ করছেন। এই বিষয়গুলোর জন্য বাবা-মায়ের কিছু সংশয় তো কাজ করছেই। সেগুলোকে এই গোষ্ঠী (মিথ্যাচারকারী) কাজে লাগাচ্ছে।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সবচেয়ে খারাপ যেটা, একেবারেই অগ্রহণযোগ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে মিথ্যাচার করছে। এমনকি ধর্মীয় বিষয় নিয়েও মিথ্যাচার করছে, সেগুলো জঘন্য মিথ্যাচার। তার পাশাপাশি অতি সম্প্রতি দেখছি—যেগুলো আমাদের প্রশিক্ষণের অংশ নয়, শিক্ষক প্রশিক্ষণের অংশ নয়, ক্লাসের অংশ নয়, নতুন শিক্ষাক্রমের অংশ নয়, তেমন নানান রকমের ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। অতীতের কোনও প্রশিক্ষণর ব্রেক থাকে, প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে নিজেরা নিজেরা বিনোদনের জন্য সেই রকম; যা মাধ্যমিকেরও নয় সেই রকম অতীতের অন্যান্য প্রশিক্ষণের বিনোদনের অংশ সামাজিক যোগোযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে এইগুলো প্রশিক্ষণ। এমনকি নতুন ভিডিও তৈরি করেও ছড়িয়ে দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।’

অভিভাবকদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘একটু দেখুন, আপনার সন্তানদের দিকে তাকিয়ে দেখুন। আপনার বাচ্চা যদি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে থাকে তাহলে তার আচার-আচরণ পরিবর্তন হয়েছে। সে কত নম্বর পেয়েছে সেদিকে নজর না দিয়ে সে শিখলো কিনা, সেদিকে নজর দিন। একটু ধৈর্য ধরুন।‘

নতুন শিক্ষাক্রমে দেশের ৮ শতাধিক বিশেষজ্ঞ জড়িত ছিলেন উল্লেখ করে ডা. দীপু মনি আরও বলেন, ‘সবাইকে কোনও না কোনোভাবে এর সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওয়েবসাইটে রেখে জনগণের মতামত, পরামর্শ নেওয়া হয়েছে, সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। সবশেষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে, কিছু পরামর্শসহ তিনি অনুমোদন দিয়েছেন। আমরা পাইলটিং করেছি। তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয়েছে। সব বইকে আমরা বলছি পরীক্ষামূলক সংস্করণ, আমরা মনে করিনি— আর পরিশীলন, পরিমার্জন দরকার নেই, একবারে চূড়ান্ত। আমরা মনে করি— এই বইগুলো আরও পরিশীলন, পরিমার্জনের সুযোগ রয়েছে। সে জন্য সবার পরামর্শ গ্রহণ করছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *