কক্সবাজার

প্রথমদিনই বিক্রি হলো ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার টিকিট

অনলাইনে বরাদ্ধ কম; মুহূর্তেই ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনের টিকিট শেষ।

শুরু হলো কক্সবাজার এক্সপ্রেসের টিকিট বিক্রি। বৃহস্পতিবার দেয়া ১, ২ ও ৩ ডিসেম্বরের টিকিট। মাত্র দেড় ঘন্টায় শেষ হয়ে যায় ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনের ২ হাজার ৫০০ টিকিট। আর কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে কারিগরি ত্রুটির কারণে কক্সবাজার-ঢাকা টিকিট বিক্রিতে কিছু ধীরগতি ছিল। তারপরও এই স্টেশনে বিক্রি হয় প্রায় ২ হাজার টিকিট। আর আইকনি স্টেশনে টিকিট পেয়ে বাঁধ-ভাঙ্গা উচ্ছ্বাস ছিল কক্সবাজারবাসির।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘ঢাকা-কক্সবাজার, কক্সবাজার-ঢাকা প্রথম দিন ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যার মধ্যে ঢাকা স্টেশনে প্রায় ২২ লাখ ৫০ হাজার এবং কক্সবাজার স্টেশনে ১৬ লাখ টাকা।
নীল আকাশ আর নীল জলরাশি টানে সব প্রকৃতি প্রেমী ছুটেন বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশন। সারাদিন ঘোরাঘুরি করে আবার ফিরতে পারবেন নিজ গন্তব্যে।

বৃহস্পতিবার কাউন্টার ও অনলাইনে একযোগে শুরু হয় টিকিট বিক্রি। প্রথমদিন ঢাকা ও কক্সবাজারে টিকিট বিক্রি হয় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার।
কক্সবাজার শহরের ডিককুল এলাকার বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘ভাবতেও পারছি না কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন থেকে ট্রেনের টিকিট কাটব, কক্সবাজার থেকে ট্রেনে করে ঢাকা যাব।’
টিকিট ক্রয় করা ভূট্টো বলেন, স্বপ্ন ছিল কোন এসময় ট্রেনে করে ঢাকায় যাবে, তা বাস্তবায়ন হচ্ছে। খুবই আনন্দ লাগছে।
টিকিট ক্রয় করা আরেক যাত্রী হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা একটা কালের সাক্ষী হলাম। প্রথম ট্রেনের টিকিট ক্রয় করলাম আর প্রথম যাত্রায় যাত্রী হব। এর চেয়ে ভালো কিছু আর হতে পারে না। সত্যিই খুবই আনন্দ লাগছে।
এদিকে কক্সবাজার এক্সপ্রেস যাত্রা করবে পহেলা ডিসেম্বর। তাই কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন টিকিট বিক্রি হবে জেনে সকাল ৮ টার আগেই হাজির কক্সাবাজারের যাত্রীরা। আর টিকিট বিক্রিতে প্রস্তুত শুরু করে কাউন্টারের বুকিং সহকারি। তাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন স্টেশন মাস্টার। কিন্তু শুরুতেই পড়তে হয় সার্ভার জটিলতায়। যার কারণে অপেক্ষা প্রহর শেষ হচ্ছিল না টিকিট কাটতে আসা যাত্রীদের।
আইকনিক রেলস্টেশনের টেকনিশিয়ান মো. হাসিবুল ইসলাম বলেন, কাউন্টারে সার্ভার জটিলতার কারণে কিছু টিকিট পেতে যাত্রীদের কিছু সময়ক্ষেপন হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে জটিলতা কাটিয়ে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। তবে টিকিট পাওয়ার পর যাত্রীদের চোখে-মুখে ঈদের আনন্দ দেখতে পেয়েছি। আমরাও যাত্রীদের টিকিট দিতে পেরে খুবই খুশি লাগছে।
অবশেষে সার্ভার জটিলতা কাটিয়ে সকাল ৯টা ৪৮ মিনিটে শুরু হয় টিকিট বিক্রি। আর দীর্ঘ অপেক্ষার পর টিকিট হাতে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস কক্সবাজারবাসির।
কক্সবাজার কাউন্টারে প্রথম টিকিট ক্রয় করা সরওয়ার কামাল বলেন, প্রায় দেড় ঘন্টা অপেক্ষা করার পরে ট্রেনের টিকিট পেলাম কক্সবাজার থেকে ঢাকা যাওয়ার। অনেক ভাল লাগছে। আমি মনে করি, কক্সবাজারের মানুষের জন্য এবং কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য এই রেলপথ অগ্রনী ভূমিকা রাখবে।
পহেলা ডিসেম্বর প্রথমে মাত্র ১৬টি কোচ দিয়ে যাত্রা শুরু করছে কক্সবাজার এক্সপ্রেস। শোভন চেয়ার ৬৯৫ এবং স্নিগ্ধা এসি চেয়ার ১৩২৫ টাকা দাম ধরা হয়েছে। নিমিষেই ঢাকা কাউন্টারে শেষ হয়েছে পহেলা ডিসেম্বরের সব টিকিট আর মাত্র দেড় ঘন্টায় শেষ হয় ২ ও ৩ ডিসেম্বরের সব টিকিট।
কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন মাস্টার গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে ১, ২ ও ৩ ডিসেম্বরের টিকিট অনলাইনে ও রেলস্টেশনে বিক্রি শুরু হয়। যা এক টানা দেয়া রাত ১০টা পর্যন্ত। প্রথম দিন কক্সবাজার স্টেশনের কাউন্টার এবং অনলাইন থেকে ২ হাজার টিকিট বিক্রি হয়। প্রথম দিনই ১৬ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হয়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি আরও বলেন, সারা দেশের মানুষ অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কিনছেন। ঢাকা থেকে কক্সবাজার রুটের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। কক্সবাজার থেকে ঢাকা রুটের মাত্র কিছু টিকিট বিক্রি এখনো বাকি আছে। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে ৪ ডিসেম্বরের টিকিট বিক্রি শুরু হবে। আগামী ১ ডিসেম্বর দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজার থেকে প্রথম ট্রেন ঢাকা ছাড়বে।
গোলাম রাব্বানী বলেন, প্রাথমিকভাবে টিকিট কাউন্টার খোলা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে বাকি সেবা চালু করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ নভেম্বর নবনির্মিত চট্টগ্রামের দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন করেন।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে দুই ধরনের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। শোভন চেয়ার ও স্নিগ্ধা এসি চেয়ার। ঢাকা থেকে কক্সবাজারে শোভন শ্রেণির টিকিটের মূল্য ৬৯৫ ও স্নিগ্ধা এসি চেয়ারের মূল্য এক হাজার ৩২৫ টাকা। আর কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটের শোভন চেয়ারের ভাড়া ২৫০ টাকা ও স্নিগ্ধা এসি চেয়ারের ভাড়া ৪৭০ টাকা। এই ট্রেনে মোট ১৬টি কোচ রয়েছে। ১৪টি যাত্রীবাহী ও দুটি খাবারের। মোট আসন রয়েছে ৭৮০টি। এর মধ্যে শোভন শ্রেণির ৪৫০টি ও এসি চেয়ারের ৩৩০টি।
এদিকে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়াও পর্যটন শিল্পের বিকাশে নতুন ট্রেন ভূমিকা রাখবে প্রত্যাশা করে অল্প দিনে ট্যুরিস্ট ট্রেনসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিতের আশ্বাস রেলওয়ে ঢাকা বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার।
ঢাকা বিভাগ রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ আলম কিরণ শিশির বলেন, যাতায়াত ব্যবস্থার পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই রেলপথ। তাই এই রেলপথে সব ধরণের সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

সময় সূচি : ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি কক্সবাজার থেকে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রাবিরতি দিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছবে রাত ৯টা ১০ মিনিটে। আর ঢাকা থেকে রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে ঢাকা বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম স্টেশনে যাত্রাবিরতি দিয়ে কক্সবাজারে পৌঁছবে ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *