প্রাচীন চট্টগ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্য গুলোকে দেশের প্রত্ন আইনে সংরক্ষণ করুন
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে লেখক মিলনমেলায় বক্তারা।
ইতিহাস বিষয়ক অনিয়মিত কাগজ কিরাত বাংলা’ র ১২ বছর পূর্তি উপলক্ষে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সুলতান আহমদ মিলনায়তনে ‘ কিরাত বাংলা লেখক মিলনমেলা ১৪৩০ বঙ্গাব্দ – গতকাল (২ ডিসেম্বর ২০২৩) শনিবার বিকেলে লেখক ও প্রাবন্ধিক জিএম মামুনুর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রবীন শিক্ষাবিদ, দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকার সম্পাদক মিসেস ফাতেমা জাহান। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নজরুল গবেষক এম এ সবুর।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বীরগেরিলা মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ফজল আহমদ, মরমী লেখক কবি সিরাজুল মোস্তফা, বাংলাদেশ মুসলমান ইতিহাস ও সাহিত্য সমিতির সভাপতি লায়ন শওকত আলী নুর, শিক্ষাবিদ ড. সবুজ বড়ুয়া শুভ, ইতিহাস পত্রিকা কিরাত বাংলার সম্পাদক সোহেল মো. ফখরুদ-দীন, প্রধান সম্পাদক লায়ন দুলাল কান্তি বড়ুয়া, প্রবীন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক স্মৃতি বড়ুয়া, প্রবীন লেখক ও শিক্ষাবিদ নীহারেন্দু বড়ুয়া, অধ্যাপক বেলাল হোসাইন, অধ্যক্ষ মোকতাদের আজাদ খান, কবি ও কথাশিল্পী স্মরণীকা চৌধুরী, রুজি চৌধুরী, ব্যাংকার কবি মানজুরুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সংগঠক, কবি শাহাবুদ্দিন বাবু, কবি আবদুল্লাহ মজুমদার, অনুবাদক ও সাংবাদিক আদনান তাহসিন আলমদার,কবি কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার, কবি আলমগীর হোসাইন, শিক্ষাবিদ ইলিয়াছ রেজা, লেখক হানিফ মান্নান, কবি সাফাত বিন সানাউল্লাহ, মোহাম্মদ মুদ্দাসির, উপাধ্যক্ষ কবি শিহাব ইকবাল, মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, কবি আনোয়ার হোসেন রানা,আবদুল মালেক,মরমী কবি নাজমুল হক শামীম, কবি দেলোয়ার হোসেন মানিক, পূঁথিপাঠক ইমাম আবদুল হালিম,আবু সুফিয়ান,সংগীতশিল্পী অনজনা বড়ুয়া, আবদুর রহমান জোনায়েদ, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক দিদারুল আলম, হ্যাপী বড়ুয়া, নাজনীন সুলতানা, সঞ্চায়ন চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। লেখক মেলা শুরুতেই বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনে সবাই দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন। স্মারক বক্তৃতা প্রধান করেন লেখক লায়ন দুলাল কান্তি বড়ুয়া।
লেখক মিলনমেলায় বক্তারা বলেছেন, ১৭৭৬ সালে প্রণীত ব্রিটিশ মানচিত্রে চট্টগ্রাম সরকার – তখন চট্টগ্রাম নামটি সরকারি দলিলে প্রচলিত ছিল না। এর নাম ছিল ইসলামাবাদ, যা ১৬৬৬ সালে মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খান রেখেছিলেন। স্থানীয়ভাবে ইসলামাবাদের আটপৌড়ে নাম ছিলো চাটিগাঁও। ব্রিটিশরা এই নামটিই গ্রহণ করে। চাটিগাঁওয়ের সংস্কৃত উচ্চারণ চট্টগ্রাম। এখনো চট্টগ্রামকে অনেকে চাটগাঁ বলে অভিহিত করে থাকে। চাটগাঁর সাধু রূপ- চট্টলা। আরো প্রাচীন সময়ে আজকের এই চট্টগ্রাম ভুমিকে কত ভাবে ডাকা হতো তা ইতিহাসে ই সাক্ষী । প্রাচীন চট্টগ্রামের ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য নামগুলো সেই সৃষ্টি থেকে আজ পর্যন্ত চট্টগ্রাম কে কত নামে ডাকা হয়েছে তা ইতিহাস বইয়ে তারপ্রমান খুজে পাওয়া যায়, (১) কিরাত (২) সুহ্মদেশ, (৩) ক্লীং বা কালেন, (৪) রম্যভূমি, (৫) চিতাগাঁও, (৬) চিৎগাঁও, (৭) চট্টল, (৮) চৈত্যগ্রাম, (৯) সপ্তগ্রাম, (১০) চট্টলা, (১১) চট্টগ্রাম, (১২) চক্রশালা, (১৩) চন্দ্রনাথ, (১৪) চরতল, (১৫) চিতাগঞ্জ, (১৬) চাটীগাঁ, (১৭) শ্রীচট্টল, (১৮) সাতগাঁও, (১৯) সীতাগঙ্গা, (২০) কাঞ্চননগর, (২১) সতের কাউন, (২২) পুষ্পপুর, (২৩) রামেশ, (২৪) কর্ণবুল, (২৫) সহরেসবুজ, (২৬) পার্ব্বতী, (২৭) খোর্দ্দ-আবাদ, (২৮) পোর্টো গ্রান্ডো (বৃহৎ বন্দর), (২৯) ফতেয়াবাদ, (৩০) আনক, (৩১) রোশাং, (৩২) ইসলামাবাদ, (৩৩) মগরাজ্য, (৩৪) চিটাগং, (৩৫) ক্রিরাত বাংলা, (৩৬) যতরকুল, (৩৭) চক্রশা, (৩৮) কেলিশহর, (৩৯) আদর্শদেশ, (৪০) পেন্টপোলিস, (৪১) হরিকেল, (৪২) চতুঃগ্রাম, (৪৩) শাৎগঙ্গ, (৪৪) চিৎ-তৌৎ-গৌং, (৪৫) চাটিগ্রাম, (৪৬) চাটিজান, (৪৭) সুদকাওয়ান, (৪৮) চাটিকিয়াং, (৪৯) শাতজাম, (৫০) চার্টিগান, (৫১) জেটিগা, (৫২) জাফরাবাদ, (৫৩) হালিশহর, (৫৪) রুকাম রাজ্য, ইত্যাদি। চট্টগ্রামের ইতিহাসের ৫৪ টি প্রাচীন নামের মধ্য আদি একটি নাম কিরাত। কিরাত নামটি অতিবপ্রাচীন। কিরাত সেই ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষী। সভায় বক্তারা আরো বলেছেন, ইতিহাসের গৌরমময় সেই কিরাত কে নব প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে আজ থেকে ১২ বছর পূর্বে ‘কিরাত বাংলা’ নামের ইতিহাস বিষয়ক লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশের উদ্যোগ। কিরাত বাংলার উদ্যোগে ১২ বছরে ১১টি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সেমিনার ২টি ও চট্টগ্রাম উৎসব পালন করেছে ২টি। চট্টগ্রামের ইতিহাসে কালজয়ী মনীষীদের স্মরনে ৫টি সভাকরেছে। এতে দেশ ও বিদেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইতিহাসবিদ কবি সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবি উপস্থিত হয়ে মুল্যবান বক্তব্য রেখেছেন। কিরাত বাংলা লেখক মিলনমেলায় অর্ধশত কবি সাহিত্যিক, লেখক গবেষক, ইতিহাসবিদ, প্রাবন্ধিক, শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। সভায় বক্তারা প্রাচীন চট্টগ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্য গুলোকে দেশের প্রত্ন আইনে সরকারি ভাবে স্থায়ী সংরক্ষণ করার জন্য দাবী জানান।