কক্সবাজার

হাজারো যাত্রী নিয়ে ছুটছে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’

প্রথমবারের মতো ১ হাজার ১০ জন যাত্রী নিয়ে রাজধানী ঢাকা থেকে কক্সবাজারে এসেছে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’। গত শুক্রবা আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেনটি সমুদ্র শহর থেকে ১ হাজার ২০ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন ত্যাগ করেছিল।

এদিন রাত ৯টা ২০ মিনিটে কমলাপুর রেল স্টেশনে পৌঁছার আধা ঘণ্টার ব্যবধানে ফিরতি যাত্রা করে বহুল প্রতীক্ষিত ট্রেনটি। কক্সবাজার আসার আগে সেখানে যাত্রীদের বরণ করে নেন রেলের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান।
ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে রাত ১১টায় ছাড়ার পর গতকাল শনিবার সকাল ৮টায় কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে পৌঁছে ট্রেনটি। ট্রেনে করে আসা যাত্রীদের মধ্যে ৮০০ জনই ছিলেন পর্যটক। কক্সবাজার রেলস্টেশনে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। অপরদিকে দ্বিতীয় দফায় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার পথে রওনা দেয় ট্রেনটি।
কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের লোকোমাস্টার গোলাম রব্বানী বলেন, ‘১ হাজার ১০ জন যাত্রীকে ফুল দিয়ে বরণ করে পর্যটকদের বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত ভ্রমণে স্বাগত জানানো হয়েছে। কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেনে নিরাপদ ভ্রমণের সুযোগ পেয়ে খুশি পর্যটকেরা।’
এদিকে ইতিহাসের সাক্ষী হতে প্রথম দিন প্রথম ট্রেনে কক্সবাজারে আসতে পেরে বেশ আনন্দিত যাত্রীরা।

শাকিল আজম নামের এক যাত্রী জানান, ‘অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার নয়। ট্রেন যাত্রাটা অধরা ছিল সেটা পূরণ হয়েছে। ভাবাই যায়নি যে, কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেনে যাত্রা করা যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটা করে দিয়েছেন। ইতিহাসটা ধরে রাখার জন্য যুদ্ধ করে ট্রেনের টিকেট কেটেছি।’
সাদিয়া জামান নামের এক পযটক জানান, ‘প্রথমবার ট্রেনে চড়ে কক্সবাজার এসেছি। এটি নতুন অভিজ্ঞতা। নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণে রেলের বিকল্প নেই।’
যদিও যাত্রীরা ট্রেন বাড়ানোসহ নানা দাবি জানান। তারা বলেন, ‘প্রথম চাওয়া যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। যেটা আমাদেরই প্রথম দায়িত্ব।’
পর্যটকদের বরণ করে নিতে সকাল থেকে আইকনিক রেলস্টেশনে অপেক্ষা করছিল ট্যুরিস্ট পুলিশ, কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতি, ট্রাফিক পুলিশসহ পর্যটন ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রতিষ্ঠান। ট্রেন থেকে নেমে পর্যটকেরা রেলস্টেশনের বাইরে এলে তাঁদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার কার্যালয়ের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ। তিনি বলেন, পর্যটকের সার্বিক নিরাপত্তা এবং সেবার মান বাড়াতে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
এর আগে শুক্রবার দুপুর পৌনে একটার দিকে কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন থেকে ১ হাজার ২০ জন যাত্রী নিয়ে প্রথম দফায় কক্সবাজার এক্সপ্রেস ঢাকায় যাত্রা করেছিল। প্রথম ট্রেনযাত্রার উদ্বোধন করেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ূন কবীর।
কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল গেস্টহাউস রিসোর্ট কটেজে পর্যটক আছেন পাঁচ থেকে ছয় হাজার। পর্যটক টানতে কর্তৃপক্ষ কক্ষভাড়ার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে। পাঁচ শতাধিক হোটেল গেস্টহাউসের দৈনিক ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৮০ হাজার।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৫ টাকা। এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৩২৫ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ১ হাজার ৫৯০ টাকা এবং এসি বার্থের (ঘুমিয়ে যাওয়ার আসন) ভাড়া ২ হাজার ৩৮০ টাকা। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া ২০৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণির ৩৮৬ টাকা, এসি সিটের ৪৬৬ এবং এসি বার্থের ভাড়া ৬৯৬ টাকা। ঢাকা থেকে রাতের ট্রেন ধরে সকালে কক্সবাজার নেমে সারা দিন সমুদ্রসৈকত বা দর্শনীয় স্থান ঘুরে রাতের ট্রেনে আবার ঢাকা ফেরার সুযোগ রাখা হয়েছে পর্যটকদের জন্য। রেলস্টেশনে রয়েছে তারকা মানের হোটেল, শপিং মল, রেস্তোরাঁ, শিশুযতœ কেন্দ্র, লাগেজ রাখার লকার, ডাকঘর, কনভেনশন সেন্টার, তথ্যকেন্দ্র, এটিএম বুথ, প্রার্থনার স্থানসহ অত্যাধুনিক সুবিধা।
সোমবার ছাড়া প্রতিদিন রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে কক্সবাজার আর কক্সবাজার থেকে মঙ্গলবার বাদে অন্যান্য দিন দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকায় চলাচল করবে ট্রেনটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *